কপোতাক্ষ:
কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষনদ যশোর জেলার কেশবপুর,চৌগাছা ও ঝিকরগাছার ভেতর দিয়ে সাতক্ষীরা জেলায় প্রবেশ করেছে । পরে পাটকেলঘাটা, তালা প্রভৃতি প্রসিদ্ধ স্থান স্পর্শ করে রাড়ুলির নিকট শিবসা নদীতে মিশে গেছে । কপোতাক্ষনদ খুলনা- সাতক্ষীরার সীমানা নির্দেশ করে ক্রমশ দক্ষিণ দিক অগ্রসর হয়ে শ্যামনগর উপজেলার চাঁদনিমুখার কাছে আড়পাঙ্গাশিয়া নামধারণ করে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে মালঞ্চ নদীর সাথে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে ।
ইছামতিওযমুনা:
গঙ্গা নদীর দুটো বিশিষ্ট শাখা নদী ইছামতি ও যমুনা । ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণগঞ্জের কাছে মাথাভাঙ্গা নদী একটি শাখা চুনি নামধারণ করেছে । সেখান থেকে একটি শাখা ইছামতি নাম ধারণ করে সর্বপ্রথম অগ্রসর হয়েছে । এটি পশ্চিমবঙ্গের বনগ্রাম (বনগাঁ) অতিক্রম করে সর্বপ্রথম কলারোয়া উপজেলার চান্দুড়িয়া সীমানা স্পর্শ করে কিছুদূর আন্তর্জাতিক সীমা বরাবর প্রবাহিত হয়ে পুনরায় ভারতের ভেতরে গোপালপুরে প্রবেশ করেছে । অতঃপর গোবরডাঙ্গার দক্ষিণে চারঘাটের কাছে টিপির মোহনায় যমুনা-ইছামতি মিলিত হয় এবং এখানে যমুনা ইছামতির কাছে আত্মসমর্পণ করে নিজের নাম বিলুপ্ত করে দেয় । যমুনা নদীর বৈশিষ্ট্যের কথা বলতে গিয়ে সতীশচন্দ্র মিত্র লিখেছেন, যমুনার যেন একটা স্বভাব এই যে, সে অধিক দূর পর্যন্তএকক অগ্রসরহইতে পারে না । তিনি লিখেছেন, ইছামতি সোজা দক্ষিণেপ্রবাহিত হয়েছে ।বাংলাদেশ-ভারত সীমা নির্দেশ করে দেবহাটা উপজেলার টাউনশ্রীপুর,দেবহাটা প্রভৃতি গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কালিগঞ্জ উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের উত্তর সীমা দিয়ে পূর্বমুখে প্রবাহিত হয়েছে । পরে কালিগঞ্জের পাশে পুনরায় দক্ষিণমুখী হয়ে শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর পৌছিয়েছে । তবে স্থানীয় অধিবাসীগণ কালিগঞ্জ থেকে যে খালটি বর্তমানে শ্যামনগরে বহমান আছে তাকে মরা যমুনা হিসেবেই জানে । কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা আর শ্যামনগরের খানপুরের কাছে জাহাজঘাটা নামক স্থানটি বিগতযৌবনা যমুনারই স্মৃতি বহন করেছে। যমুনা নদীর হারানো ঐতিহ্যের আরো পরিচয় পাওয়া যায় প্রচলিত প্রবাদটির ভেতরে - যমুনা নদী মরবে না, অধিকারীরা পড়বে না । যমুনা নদীর এই দূর্দশার কারণ হিসেবে বিভিন্ন গ্রন্থাদি আর লোকমুখ থেকে জানা যায়, বাংলা ১২৭৪ সালের ১২ কার্তিক (১লা নভেম্বর ১৮৬৭) তারিখে এ অঞ্চলে ভিষণ ঝড় হয় । এতে এক রাত্রে সুন্দরবনের ১২ ফুট পর্যন্তপানি বেড়ে যায় । পরদিন যমুনার স্রোতে ভিষণ পরিবর্তন লক্ষ্যকরা যায় । বালি জমে যমুনার গতি অনেক মন্দা হয়ে যায় । কালিন্দীর জোয়ার যমুনায় প্রবেশ করে তাকে দোটানা করে দেয়। ফলে অল্প দিনের মধ্যে যমুনা প্রায় শুকিয়ে যায় ।
ঈশ্বরীপুরের নিকট যমুনা -ইছামতি আবার দুভাগে বিভক্ত হয়েছে ॥ যমুনার ডানদিকে (পশ্চিমে) কিছুটা অগ্রসর হয়ে ‘মাদার’ নাম নিয়ে দক্ষিণমুখী হয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে কিছুদূর গিয়ে আবার ‘যমুনা’ নাম নিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । আর ইছামতি বামদিকে ঈশ্বরীপুরের পূর্বপাশ দিয়ে ‘কদমতলী’ নাম ধারণ করে মুন্সিগঞ্জে সুন্দরবনের সীমা নির্দেশ করে কদমতলী বন অফিসের কাছে ‘মালঞ্চ’ নাম ধারণ করে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে
কালিন্দী:
কালিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমে বসন্তপুরে যমুনা থেকে একটি শাখা সোজা দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে । এটি কালিন্দী নামে পরিচিত । এই নদী বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারতে সীমানা নির্দেশ করছে । রাজা প্রতাপাদিত্যের সময় কালিন্দী সাধারণ খালের মতো ছিল । ১৮১৬ সালে খনন করে একে আরো দক্ষিণে কলাগাছিয়া নদীর সাথে যোগ করা হয় । পরবর্তীকালে বানে কালিন্দী বড় নদীতে পরিনত হয় বলে কথিত আছে । আন্তর্জাতিক সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে কালিন্দী রায়মঙ্গলের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে ।
কাকশিয়ালী:
কালিন্দীকে কলাগাছিয়ার সাথেযোগ করার আগে কালিগঞ্জের যমুনা থেকে একটি খাল কেটে পূর্ব দিকে উজিরপুরের নিকটে গলঘেসিয়ার সাথে যুক্ত করা হয় ।এটি ‘কাকশিয়ালী’ নদী নামে পরিচিত । বৃটিশ ইঞ্জিনিয়ার উইনিয়াম ককশাল এই খাল খনন করেন । তার নামানুসারে এই খালের নাম হয় ‘কাকশিয়ালী
বেতনা(বেত্রাবতী) :
ভৈরবের একটি শাখা নদী বেতনা । যশোর জেলার নাভার-বাগাছড়া প্রভৃতির উপর দিয়ে সাতক্ষীরা জেলায় প্রবেশ করেছে । কলারোয়া পৌরসভার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা, বিনেরপোতা হয়ে পূর্ব-দক্ষিণে বুধহাটার গাংনাম ধারণ করেছে । অতঃপর আরও দক্ষিণে মানিকখালিতে মরিচ্চাপের সাথে মিলিত হয়েছে ।এখানথেকে একটি শাখা পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বড়দলের উপর দিয়ে কপোতাক্ষে যুক্ত হয়েছে আর অপর শাখা দক্ষিণে খোলপেটুয়ার সাথে মিশেছে ।
খোলপেটুয়া:
আশাশুনি উপজেলার মানিকখালিতে বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী খোলপেটুয়া নাম ধারণ করে দক্ষিণ মুখে এগিয়ে চলেছে । পথিমধ্যে কাপসন্ডা, গোরালি প্রভৃতি স্থান স্পর্শ করে ঘোলা নামক স্থানে গলঘেসিয়া নদীর সাথে যুক্ত হয়েছে । অতঃপর আরও দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে শ্যামনগর উপজেলার নওয়াবেকির পাশ দিয়ে বুড়িগোয়ালিনিতে আড়পাঙ্গাশিয়া নাম ধারণ করেছে এবং পারশেমারির নিকট কপোতাক্ষের সাথে মিলিত হয়েছে ।
গলঘেসিয়া:
শ্যামনগর উপজেলার ঘোলা নামক স্থানে খোলপেটুয়া নদী থেকে একটি শাখা নদী প্রথমে শ্যামনগর-আশাশুনি পরে কালিগঞ্জ-আশাশুনি উত্তরদিকে প্রবাহিত হয়েছে ।এটি ‘গলঘেসিয়া’ নামে পরিচিত । পথিমধ্যে বাঁশতলা,মহিষকুড়,শ্রীউলা প্রভৃতি স্থান স্পর্শ করে এটি যমুনা প্রবাহ কাকশিয়ালী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে ।বর্তমানে ‘গলঘেসিয়া’ নদীর অনেক স্থানে ভরাট হয়ে গেছে । ফলে ভাটার সময় এটি দিয়ে বড় ধরণের নৌযান চলতে পারে না । এতে এ নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহি মহিষকুড় হাটও অনেকটা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে ।
মরিচ্চাপ:
এই নদী সাতক্ষীরাসদর উপজেলার ওপর দিয়ে এল্লারচর হয়ে ক্রমশ দক্ষিণ-পুর্বমুখী হয়ে আশাশুনি উপজেলায় প্রবেশ করেছে । আশাশুনি উপজেলার কামালকাটি, শোভনালী, চাপড়া প্রভৃতি স্থান স্পর্শ করে মরিচ্চাপ মানিকখালিতে বেতনা ও খোলপেটুয়া নদীর সাথে মিলিত হয়েছে ।
প্রাণসায়র:
ব্রিটিশ আমলে সাতক্ষীরার বিখ্যাত জমিদার প্রাণনাথ রায়চৌধুরী এল্লারচর নামক স্থাানে মরিচ্চাপ নদী থেকে একটি খাল খনন করে সাতক্ষীরা পৌরসভার ওপর দিয়ে উত্তর দেকে নৌখারি খালের সাথে সংযোগ করেন । এটি প্রাণসায়র, প্রাণসায়ের বা সায়রের খাল নামে পরিচিত । সাতক্ষীরা শহরের প্রাণকেন্দ্র দিয়ে প্রবাহিত এই ঐতিহাসিক খাল প্রায় মজে গেছে । দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা, দোকানপাটা স্থাপনের ফলে প্রাণসায়র তার অতীত ঐতিহ্য হারাতে বসেছে ।
দক্ষিনতালপট্টিদ্বীপ:
দক্ষিন তালপট্টি দ্বীপ সাতক্ষীরা জেলার হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনা অবস্থিত। এ দ্বীপটির অপর নাম হচ্ছে নিউমুর বা পূর্বাশা। দ্বীপটির আয়তন ৮ বর্গ কিলোমিটার । দ্বীপটির রয়েছে অপরুপ সৌন্দর্য। এটি নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিরোধ বিদ্যামান।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস